0
সম্প্রতি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, তাদের ১২৮ কোটি ব্যবহারকারীর মধ্যে ১০ কোটি অ্যাকাউন্টই ভুয়া। এসব ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে পরিচয় গোপন করে অনেকে অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে। অনেক ব্যবহারকারী প্রতারিত হচ্ছে।  জেনে নিন এমন বিপজ্জনক অ্যাকাউন্ট কীভাবে এড়িয়ে চলবেন।
১. ভুয়া অ্যাকেউন্টের অনাহুত ব্যক্তিদের সতর্কতার সঙ্গে এড়িয়ে চলুন। প্রথমে এরা বন্ধুর মতো আচরণ করে অথবা প্রেম নিবেদনের অভিপ্রায় দেখায়। এরা একধরনের নির্দোষ মাইন্ড গেম খেলে। অনেকে আপনার অর্থকড়ি এবং সম্পদ নিয়ে আলাপ জমানোর চেষ্টা করতে পারে। এভাবে খাতির জমিয়ে একসময় আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করে নিয়ে যাবে। সে তথ্য দিয়ে পড়ে আপনাকেই বিপদে ফেলবে। অনেক সময় বাড়িতে চুরি-ডাকাতির ঘটনাও ঘটে এমন ভুয়া আইডির লোকদের সঙ্গে খোলামেলা আলাপের সুযোগে।
২. অপরিচিত কারো সঙ্গে কথা বলবেন না। যাকে চেনেন না অন্তত তার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট গ্রহণ করবেন না। এছাড়া যদি আপনার সঙ্গে বৈধভাবে বা যাচাই করা যায় এমন পন্থায় যুক্ত নয় তাদের উপেক্ষা করবেন। তার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে নিচের পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন-
তাদের জিজ্ঞেস করুন: উনি কেন আপনার বন্ধু হতে চান, কীভাবে আপনাকে জানলেন, আপনার পরিচিত কাউকে চেনেন কি না। তাদের নামে ক্লিক করেই আপনি মিচ্যুয়াল ফ্রেন্ড আছে কি না দেখতে পারবেন।
৩. একটু গোয়েন্দাগিরি করতে হবে। প্রোফাইলটি খুব সতর্কতার সঙ্গে পড়ুন। এতে যা বলা আছে সেসব তথ্য বিশ্বাস করা যদি কঠিন হয় তাহলে তো ‍বুঝতেই পারছেন!
৪. প্রোফাইল ছবিটি যাচাই করুন। ছবিটি ইউনিট কি না তা সহজেই দেখতে পারেন গুগলে ইমেজ সার্চ দিয়ে।
৫. নামটি ইন্টারনেটে সার্চ করুন। দেখুন ওমন কিছু পাওয়া যায় কি না। অবশ্য যদি কোনো কমন নাম ব্যবহার করে তাহলে এ কৌশল খুব একটা কার্যকরী নয়। তবে যদি সাধারণ নাম না হয় তাহলে কিন্তু সার্চ রেজাল্টে মজার কিছু তথ্য পেতে পারেন।
যদি কমন নাম হয় তাহলে সার্চের সঙ্গে লোকেশন, আনুমানিক বয়স বা প্রোফাইলে দেয়া অন্য কোনো তথ্য যুক্ত করে সার্চ করতে পারেন।
কোনো কিছুতে কি তাদের ট্যাগ করা আছে? একজন ব্যক্তি সাধারণত কোনো কনটেন্টের সঙ্গে ট্যাগ করা থাকে যা ফেসবুক শেয়ারেরই একটি অংশ।
৬. তার বন্ধুদের একটু যাচাই-বাছাই করে দেখুন। বন্ধুরা কি স্থানীয় নাকি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে? স্থানীয় বন্ধু বেশি থাকলে অ্যাকাউন্টটি সত্যি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে বিদেশি বন্ধু বেশি থাকলে তাকে সন্দেহ করার যথেষ্ট যুক্তি আছে। এ ধরনের লোকেরা বেশিরভাগই দেখবেন অত্যন্ত সুন্দর নারীর ছবি প্রোফাইলে ব্যবহার করে। হয়ত একদিন হঠাৎ দেখবেন আপনার মেসেজ বক্সে লেখা: আমি তোমার ছবি দেখেছি। তুমি তো খুব সুন্দর! এই ধরনের তোষামোদী কথাবার্তা থাকবে।
৭. যদি আপনার কোনো ব্যক্তিকে সন্দেহ হয় তাহলে রিকুয়েস্ট ব্লক করে দিতে পারেন। সন্দেহভাজনদের একটা তালিকা করে একসঙ্গে সবাইকে স্থায়ী ব্লক করে দিতে পারেন। কাজটা খুবই সহজ: তাদের ফেসবুক নামে ক্লিক করে টাইমলাইনে যান। ডান পাশে কভার ফটোর নিচে মেসেজ সেটিংয়ে যান। সেখান থেকে আপনি তাকে ব্লক করতে পারেন অথবা সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের জন্য ফেসবুকে তাদের ব্যাপারে রিপোর্ট করতে পারেন।
৮. বন্ধুর বন্ধু বা বন্ধুর সাজেশনে নির্বিচারে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট গ্রহণ করার বাতিক থাকে অনেকের। অভ্যাস, গান, খাবার, রান্না ইত্যাদি পছন্দের সঙ্গে মিল আছে বলে চোখ বন্ধ করে অনেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট গ্রহণ করেন। তাদের জন্য পরামর্শ হলো- প্রথমে তার ‍ওপর আস্থা রাখার চেষ্টা করুন এবং পর্যবেক্ষণ করুন। একদম অপরিচিত হলে কিন্তু খুব ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে। তাই এক বা দুই সপ্তাহ সময় নিতে হবে। এরপর তার আচরণ সন্দেহজনক বা অস্বস্তিকর মনে হলে সরাসরি আনফ্রেন্ড করে দিন।
৯. ভুয়া অ্যাকাউন্টের জাল সম্পর্কে সাবধান! একটা গ্রুপ হয়ত পেলেন যারা আপনার প্রিয় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে, বিভিন্ন কনটেন্ট শেয়ার করে তাহলে তো ধরে নেয়াই যায় এরা সবাই সত্যিকারের। কিন্তু না, আপনার ধারণা ভুলও হতে পারে। এমন অনেক উদাহরণ আছে, একই ব্যক্তি অনেকগুলো ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে ওই ধরনের কার্যক্রম চালায়। এতে অনেকেই প্রতারিত হতে পারে।
১০. যে একসাথে একাধিক ভুয়া অ্যাকাউন্ট চালায় সে কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ আলাদা থাকতে পারে না। একসময় গিয়ে সবকিছু গুলিয়ে ফেলে। এসব বিষয় নজরে এলে তাকে প্রশ্ন করলে দেখবেন উত্তরের মধ্যে অসঙ্গতি থাকছে।
১১. আচরণে অসঙ্গতি চোখে পড়বে। যেমন: প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি কিশোরের মতো আচরণ করে। এমন কোনো বিষয় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতো কথা বলে অথচ একজন কিশোরের তা জানার কথা না। আবার তার ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করলে বলে, ‘দুনিয়ার কোনো মানুষই পারফেক্ট নয়’।
১২. বাড়াবাড়ি রকমের স্নেহ, ভালোবাসা, রোমাঞ্চ প্রকাশ করে। আপনার কাছ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে আছে, আপনাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে কিন্তু সে তার প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করতে অনীহা দেখায়- তখন বুঝবেন এখানে কোনো সমস্যা আছে। ভুয়া অ্যাকাউন্টধারীরা জীবন ও মানুষের অনুভূতি নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। এদের অনেকেই অর্থ, যৌনতা বা মাদকের মোহে আক্রান্ত।
এছাড়া হুট করে অসময়ে অপ্রাসঙ্গিকভাবে প্রেম নিবেদন, আবেদনময় ছবি চেয়ে বসা এরকম অ্যাকাউন্ট নিঃসন্দেহে ভুয়া। এমনও হতে পারে সে পর্নোগ্রাফির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
১৩. সবচেয়ে ভালো হয় যদি একেবারেই পরিচিত জন যেমন: আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠী ছাড়া আর কাউকে ফেসবুক বন্ধু না বানান। যদি ইতিমধ্যে বানিয়ে থাকেন তাহলে আপনার অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তার স্বার্থে এখনই সোজা আনফ্রেন্ড করে দিন।

Post a Comment

 
Top