‘বাংলাদেশ সন’ এর বর্ষপঞ্জী আবিষ্কার!!!
বাংলাদেশি সব বন্ধুদের জন্য দারুন এক সুখবর। দিন তারিখ গণনার ক্ষেত্রে আমরা ইংরেজি, বাংলা এবং আরবি ক্যালেন্ডারকে অনুসরণ করে থাকি। কিন্তু আমরা কি কখনো “বাংলাদেশ ক্যালেন্ডার” এর নাম শুনেছি?
পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। ২৬
মার্চ স্বাধীনতা দিবসকেই ধরা হয় বাংলাদেশের জন্মদিন। সে হিসেবে এখন
বাংলাদেশের বয়স ৪৪ বছর।
হযরত ইছা (আঃ) এর জন্মদিন হিসেবে পৃথিবীতে প্রচলিত আছে খ্রিস্টান
সম্প্রদায়ের খ্রিস্টাব্দ। সম্রাট আকবরের শাসনামল থেকে প্রচলন আছে
বঙ্গাব্দের। ২০১৪ হচ্ছে খ্রিস্টাব্দ আর ১৪২১ হচ্ছে বঙ্গাব্দ। কিন্তু নেই
বাংলাদেশ সন তারিখ এর কোন বর্ষপঞ্জি। এর প্রয়োজনীয়তা থেকেই দীর্ঘ প্রায় দুই
যুগ ধরে অব্যহত প্রচেষ্টার পর “বাংলাদেশ সন” ক্যালেন্ডার প্রণয়ন সম্পন্ন
করতে সক্ষম হন। ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করেন শ্রদ্ধেয় আমার আব্বাজান মোহাম্মদ
বদরুল ইসলাম। আর আমাদের বাড়িটা হচ্ছে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা থানার
ইসলামপুর গ্রামে।
ক্যালেন্ডারটা প্রণয়ন সম্পন্ন হয়েছে কয়েক বছর আগেই। কিন্তু এই কয়েক বছরে
প্রকাশনার জন্য জাতীয় দৈনিক গুলোর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বাংলাদেশ সন তারিখ
আলোর মুখ দেখতে পারেনি। তাই আমার কাছে মনে হোল সামাজিক ওয়েবসাইট গুলোতে
শেয়ার করলে এই এত্তবড় বিষয়টা অনেক মানুষের নজরে আসবে।
সময় গণনার ক্ষেত্রে খ্রিষ্টাব্দের পরেই বঙ্গাব্দের প্রচলন ছিল। পরে ডঃ
মোঃ শহিদুল্লাহর নেতৃত্বে বঙ্গাব্দের কিছু সংশোধন করে বাংলা সনের প্রতিষ্ঠা
পায়। আরো পরে এই বাংলা সনের কিছু পরিমার্জন করে সময়োপযোগী করা হয়। দক্ষতা ও
প্রয়োগের অভাবের কারণে বাংলা সনও খ্রিষ্টাব্দের আবরণে আচ্ছাদিত হয়ে পড়ে।
ফলে অন্তত দুই যুগ পূর্ব ধরে গবেষণা করে বাংলাদেশের নিজস্ব একটি বর্ষপঞ্জি
প্রণয়ন করা হয়।
বাংলাদেশ সন তারিখের উপযোগিতা তুলে ধরতে এর কিছু বৈশিষ্ট পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তুলে ধরা হলঃ
১) বাংলাদেশ সনের দৈর্ঘ্য সোয়া ৩৬৫ দিন।
২) প্রতি চার বৎসর অন্তর খ্রিষ্টাব্দের ন্যায় ১দিন অধিবৎসর ধরা হয়েছে
এবং অধিবৎসরের দিনটি প্রতি চার বৎসর শেষে বৎসরের শেষ মাস অর্থাৎ দ্বাদশ
মাসে ১দিন বৃদ্ধি পাবে। এখানে বলে রাখা ভাল, খ্রিষ্টাব্দের অধিবৎসর ইংরেজি
সনের দ্বিতীয় মাসেই অধিবৎসরের দিনটি দিয়ে একটা অসংগতি দেখা দেয়, যা বহুকাল
ধরে চলে আসছে এবং আমরা সেটা খুব একটা গুরুত্ত দেই না। অসংগতিটা হচ্ছে
বৎসরের দিনের পরিমাণ ৩৬৫১/৪ দিন। সে হিসেবে চার
বৎসর শেষে বৎসরের শেষ মাসেই অধিবৎসর হওয়ার কথা। বাংলাদেশ বর্ষপঞ্জিতে প্রতি
চতুর্থ বছরের শেষের দিনের পরের দিন অধিবৎসরের বাড়তি দিনটি সিলেক্ট করে
অর্থের এই অসংগতি দূর করে বাংলাদেশ সন তারিখে অর্থের সংগতি দান করা হয়েছে।
৩) মাসের দিনের সংখ্যাও ভিন্ন ভিন্ন। ফলে ১২ মাসের মধ্যে ৭ মাস ৩১দিন
ধরে, ৪ মাস ৩০দিন ধরে এবং শেষ মাস ২৮দিন এবং অধিবৎসরের একদিন যোগ করে ২৯দিন
ধরে এমন এক সমন্বয় সাধন করা হয়েছে যার ফলে বাংলাদেশ সনের ১২টা মাসেরই
প্রথম তারিখ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ তারিখ এবং বাংলাদেশ মাসের শেষ দিন
খ্রিষ্টাব্দের ২৫ তারিখে নির্ধারিত হয়ে পড়ে। ফলে দেশ বিদেশ থেকে বাংলাদেশ
সন তারিখ পাওয়া সহজ সাধ্য হয়ে পড়েছে।
৪) ‘বাংলা ক্যালেন্ডার’ থেকে ‘বাংলাদেশ ক্যালেন্ডার’ এর পার্থক্য হচ্ছে
১১দিন। বাংলা মাসের তারিখের সাথে ১১দিন যোগ করলেই বাংলাদেশ মাসের তারিখ
পাওয়া যাবে।
৫) মাসের দিনের সংখ্যাঃ প্রথম-৩১দিন, দ্বিতীয়-৩০দিন, তৃতীয়-৩১দিন,
চতুর্থ- ৩০দিন, পঞ্চম-৩১দিন, ষষ্ঠ-৩১দিন, সপ্তম-৩০দিন, অস্টম-৩১দিন,
নবম-৩০দিন, দশম-৩১দিন, একাদশ-৩১দিন, এবং দ্বাদশ-২৮দিন। (অধিবৎসর হলে দ্বাদশ
মাস হবে ২৯দিনের)।
৬) অধিবৎসর বের করার নিয়মঃ বাংলাদেশ সন থেকে ১ বিয়োগ করে বিয়োগফলকে ৪
দ্বারা ভাগ করলে ভাগফল যদি বিভাজ্য হয় তাহলে সেই সনটা অধিবৎসর হবে। (যেমনঃ
এখন বাংলাদেশ ৪৪ সন চলছে, তাই ৪৪-১=৪৩, ৪৩/৪=অবিভাজ্য। সুতরাং ৪৪ সন
অধিবৎসর নয়। তবে পরবর্তী বাংলদেশ সন ৪৫ অধিবতসর হয়। যেমনঃ ৪৫-১=৪৪,
৪৪/৪=বিভাজ্য।)
৭) বিশেষ বৈশিষ্ট্যঃ প্রতি ইংরেজি মাসের ২৬ তারিখে বাংলাদেশ মাসের ১
তারিখ এবং প্রতি ইংরেজি মাসের ২৫ তারিখে বাংলাদেশ মাসের শেষ তারিখ।
ধন্যবাদ, সবাই ভালো থাকুন।
Post a Comment